Forum for Energy Reporters Bangladesh
Image default
Bangla News

ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা জরুরি

ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে তার আগে নিরবিচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করাও জরুরি বলে অভিমত দিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার আযোজিত “মানসম্মত বিদ্যুতের মাধ্যমে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধের সম্ভাব্যতা এবং সম্ভাবনা” শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে এমন মতামত উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. ‍সুলতান আহমেদ বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রশ্নে উদ্যোক্তাকে আস্থায় আনতে হবে। তারপর আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি পথ বের করতে হবে। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ দিতে গিয়েও নানা রকম দূষণ প্রশ্ন ওঠে। গুণগত মানের কারণে এখন ক্যাপটিভের প্রয়োজনীয়তা ছিল। এখন কিন্তু আরেক ধরণের বাস্তবতা এসেছে। ২৫ শতাংশ এভারেজ ইফিসিয়েন্সি, অবশ্যই আমাদের ইফিসিয়েন্সির দিকে যেতে হবে। ক্যাপটিভ পাওয়ারের উদ্দেশ্যে বলেন, এমন হতে পারে কাছাকাছি কোথাও বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো সেখানে যদি আপনারা শেয়ার নিতে চান আলোচনা হতেই পারে। আমরা বিগ ডাটা নিয়ে এনালাইসিস করছি সেখান থেকে উত্তরণের কোনো উপায় পাবো আশা করি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, সম্ভাব্যতা এবং সম্ভবনার জায়গার আর আমরা নেই। এখন ক্যাপটিভ সরিয়ে দিতেই হবে। যখন দিনে আট থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল, তখন শিল্প খাতকে বাঁচাতে ক্যাপটিভকে প্রমোট করা হয়। এখন কিন্তু বিদ্যুৎ সারপ্লাস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকছে।

৮০২টি ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। ৬শ মেগাওয়াট তেল ভিত্তিক, আর ২৪’শ মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক। দৈনিক ৪৪০ এমএমসিএফডি গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। এই গ্যাস কম্বাইন্ড সাইকেলে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আমি যদি অর্থনীতিটা বিবেচনা করি এই গ্যাস কনভেনশনার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই, তাহলে শিল্পে ২ টাকা কম দরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। তবে ক্যাপটিভ মালিকরা কিন্তু এমনিতেই করছে না। তারাও রেডি, তারা বারবার নির্ভরযোগ্য বিদ্যুতের কথা বলছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিলে তারা নিতে চান। কোয়ালিটি বিদ্যুতের জন্য শিল্পহাবের কাছে উপকেন্দ্র, ডুয়েল কানেকশন নিশ্চিত করতে হবে। সরকার সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছে।শুধু, নির্ভরযোগ্য পাওয়ার নয়, ট্যারিফ স্ট্রাকচারের হাত দেওয়ার বিষয় এসেছে।

এনার্জি প্যাকের সিইও হুমায়ুন রশীদ বলেন, ক্যাপটিভ ইফিসিয়েন্ট নয় এ কথা মানতে পারলাম না। ৯০ শতাংশ ক্যাপটিভে কো-জেনারেশন রয়েছে। আইপিপি ঠিকমতো বিদ্যুৎ দিতে না পারলে তাকে জরিমানা করছে কিন্তু ফ্যাক্টরিতে কত সাইকেল দিচ্ছেন এরজন্য অনেক ক্ষতি হতে পারে। এরজন্য কোনো জরিমানা দিচ্ছেন না। শিল্পকে কিন্তু আপনি দয়া দেখাচ্ছেন না। ক্যাপটিভ যদি না থাকে তাহলে গ্যারন্টি দিতে হবে। নিরবিচ্ছিন্ন এবং মান্নসম্মত বিদ্যুৎ দিতে হবে। এখন ৩-৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এখনও সময় আসেনি ক্যাপটিভ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার।

সাইদুল ইসলাম হেলাল বলেন, হিট বেজড শিল্পে ৫ মিনিট বন্ধ থাকলে ৩০ মিনিট লাগে চালু করতে। প্লাস্টিক শিল্পে প্রত্যেক লোডশেডিংয়ে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লোকসান হয়। ২০০৮ সালে ১৫৭২ বার বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়েছে ২০১৯ সালে ৩১৭ বার লোডশেডিং হয়েছে। লোডশেডিংয়ের আগে গ্রাহককে জানান। এসএমএস করে জানান, এর জন্য যা প্রয়োজন টাকা দিতে চাই।

বিটিএমইএ প্রাক্তন পরিচালক রাজীব হায়দার বলেন, হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে ডাইং ও ফিনিসিংয়ে ওয়ার্কিং প্রসেসে থাকা প্রোডাক্ট নষ্ট হয় অথবা কোয়ালিটি নষ্ট হয়। আমাদের সেক্টরের জন্য মাথা ব্যাথার কারন।কো-জেনারেশন, ট্রাই জেনারেশন করা হচ্ছে। ওয়েস্ট হিটটা কাজে লাগিয়ে ৮৫ শতাংশ ইফিসিয়েন্স হয়েছি। যতোদিন নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা না যায় ততোদিন ক্যাপটিভ রাখা উচিত।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ার আনার জন্য প্রকৌশলীদের ভূমিকা নেই। তেমনি ক্যাপটিভ তুলে দেওয়ার তাদের মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই। আউটেজগুলো কেনো হয়, প্রি-পাওয়ার কার্ট কেনো করা যাচ্ছে না। ইউটিলিটির হাতে পাওয়ার কার্ট করার ফ্রিডম নেই। তারা এ বিষয়ে বলতেও পারবে না।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওছার আমীর আলী বলেন, শুধু নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ইস্যু নয়, ক্যাপটিভের দাম অনেক কম পড়ে স্বাভাবিকভাবে কম দামের দিকে ঝুকবে উদ্যোক্তারা। এ জন্য ক্যাপটিভের গ্যাসের মুল্য বিবেচনা করা প্রয়োজনীতা রয়েছে।ডেসকোর আওতাধীন টঙ্গী শিল্প অঞ্চলে আগামী জুনের মধ্যে পুরোপুরি নিরবিচ্ছন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।

এনার্জি এন্ড পাওয়ারের কনসালটেন্ট এডিটর খন্দকার সালেক সূফী, আমাদের সারপ্লাস বিদ্যুৎ আছে কিন্তু নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারছি না। কিছু শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দরকার, নিরবিচ্ছিন্ন নিশ্চিত না করা পর‌্যন্ত ক্যাপটিভের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

Related Posts

নির্মাণকাজ অসমাপ্ত রেখে দেশ ছেড়েছে বিদেশি কোম্পানি

FERB

অবৈধ গ্যাস সংযোগ বছরের পর বছর

FERB

অফিস করলেন বিইআরসির নতুন চেয়ারম্যান, অনুপস্থিত সদস্যরা

FERB